যশোরের মিনি চাইনিজ এবং ফার্স্টফুড ক্যাফের আড়ালে চলছে নানা ধরণের অসামাজিক কার্যকলাপ। আলো-আঁধারীর মাঝে ছোট ছোট কেবিন তৈরি করে শহরের আনাচে কানাচে গড়ে উঠেছে অসংখ্য মিনি চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ও ফাস্টফুডের দোকান। কেবিন বানিয়ে ঘন্টা চুক্তিতে ভাড়া দিচ্ছে উঠতি বয়সী ছেলে মেয়েদের কাছে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি পড়–য়া ছাত্র-ছাত্রীদের বিপথে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে এসব খুপড়িতে।
বাইরে থেকে দেখলে বোঝার উপায় থাকছে না আসলে ভেতরে কি হচ্ছে। এসব রেস্টুরেন্টের মধ্যে অন্যতম ভূমিকা রাখছে মুজিব সড়কের মিউজিক ক্যাফে নামের প্রতিষ্ঠানটি। এ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে যেন অভিযোগের শেষ নেই। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিপথগামী কিশোর-কিশোরীর আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
অনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ক্যাফের ওয়াশরুম। রয়েছে স্মোকিং জোন। আর সেখানেই স্মোকিং-এর আড়ালে রুমে গ্লাসের দরজা বন্ধ করে চলছে দেদারছে মাদকের আড্ডা। এসব ধরণের কর্মকান্ডের জন্য ইতিমধ্যে স্থানীয়রা বেশ কয়েকবার হাতে নাতে ধরেছে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এনেছে।
অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠান প্রধান বিভিন্ন মহলকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে সবকিছুই ধামাচাপা দিয়ে দিচ্ছে। কয়েকদিন অনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ রেখে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফের চলছে এসব অনৈতিকতা। মজার বিষয় হচ্ছে এতবড় প্রতিষ্ঠানে অসংখ্য সিসি ক্যামেরা সবই বিকল। এগুলোর কোনো মনিটরিং হয় না। এমনকি কোনো ফুটেজও দেখার সুযোগ থাকে না। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের উর্দ্ধতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।
গত ৩ মার্চ সন্ধ্যা সাতটা। গ্রামের কাগজের দপ্তরে অভিযোগ আসে মুজিব সড়কের মিউজিক ক্যাফের ওয়াশরুমে এক নারীকে নিয়ে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়েছেন খোদ মালিক মেহেদী হাসান নিজে। যা নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তাৎক্ষনিক গ্রামের কাগজের একটি টিম যায় ওই মিউজিক ক্যাফেতে। সেখানে যেয়ে দেখা যায় অসংখ্য মানুষ। রয়েছেন স্থানীয়রাও। এছাড়া রয়েছেন কোতোয়ালি থানা পুলিশ সদস্য ও ডিএসবির সদস্যরা। এসময় স্থানীয়রা জানান, সন্ধার পর ওয়াশরুমে এক নারীকে নিয়ে অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত ছিলেন মেহেদী। পরে ডাকাডাকি করলে মেহেদী ওয়াশরুম থেকে বের হয়েই পালিয়ে যায়। কিন্তু সেসময় ওই নারী ও তার দুই বান্ধবীকে এলাকাবাসী আটক করেন। পরে ৯৯৯-এ কল করে পুলিশকে খবর দেয়। ঘটনাস্থলে হাজির হন কোতোয়ালি থানার এসআই তৌহিদের নেতৃত্বে একটি টিম। ওই নারীকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি একেক সময় একেক তথ্য দেন। এসময় মালিক মেহেদীকে পুলিশ আসতে বললে নানা ধরণের তালবাহানা করেন। একপর্যায়ে দীর্ঘ সময় ক্ষেপন করে তিনি হাজির হন। পরে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তিনি নিজেও একেক সময় একেক রকম তথ্য দেন। শেষমেষ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখাতে বললে তিনি চুপসে যান। জানিয়ে দেন সিসি ক্যামেরা মনিটরিং কিংবা ফুটেজ দেখার কোনো ব্যবস্থা তার নেই। বাধ্য হয়ে সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক, ওই নারী ও প্রত্যক্ষদর্শী তিন যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যান এসআই তৌহিদ। পরবর্তিতে বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে বিষয়টি মীমাংশা করে নেন ক্যাফে মিউজিকের মালিক মেহেদী। এসব ঘটনায় পাল্টা তিন যুবকের বিরুদ্ধে ক্যাফেতে খেয়ে বিল না দেয়ার অভিযোগে থানায় মামলা করেন।
স্থানীয়রা জানায়, পুরো ক্যাফে অন্ধকারাচ্ছন্ন রাখা হয়। এছাড়া রয়েছে কালো ক্লাস দিয়ে ঘেরা বিশেষ একটি স্থান, সেখানেই মুলত চলে সিগারেট সেবনের আড়ালে গাঁজাসহ নানা ধরণের মাদকের আড্ডা। মেহেদী হাসান মিউজিক ক্যাফের আড়ালে মুলত অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত রয়েছেন। এ বিষয়ে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলেই নানা ধরণের হুমকি ধামকি দেন ওই মেহেদী। এমনকি নিজেকে প্রশাসনের উর্দ্ধতন এক কর্মকর্তার স্বজন পরিচয় দিয়ে তিনি পার পেয়ে যান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেহেদী হাসান বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে মিউজিক ক্যাফে নামের এই প্রতিষ্ঠানটি সুনামের সাথে পরিচালনা করে আসছেন। কিন্তু স্থানীয় একটি মহল বিভিন্ন সময় তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছে। ইতিমধ্যে ওই চক্রটি তার প্রতিষ্ঠানে এসে বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়েছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেন। তার বিরুদ্ধে ওয়াশরুমে অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগ অস্বীকার করেন। এছাড়া সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নেই কেন এই প্রশ্নের উত্তরে অহেতুক কথাবার্তা বলেন। কিন্তু কোনো ধরণের অপরাধ ছাড়া ওই চক্রকে টাকা দিয়েছেন কেন আর কেনইবা প্রশাসনকে বিষয়টি জানান নি এমন প্রশ্নের স্বদুত্তর দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে যশোর জেলা ফাস্টফুড এন্ড মিনি চাইনিজ রেস্টুরেন্ট এসোসিয়েশন সভাপতি শফিকুল আজাদ বলেন, হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের জন্য গোটা ব্যবসায়ীদের বদনাম হচ্ছে। যা মোটেও কাম্য নয়। তিনি এসব বিষয়ে প্রশাসনের নিয়মিত মনিটরিং ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। এছাড়া এসব বিষয়ে সমিতি থেকেও পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান।
Leave a Reply